Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

পানিফল : দেশি ফলের নতুন সেনসেশন

পানিতে জন্মে বলে পানিফল। প্রায় ৩ হাজার বছর আগে থেকেই চীন দেশে পানিফলের চাষ হয়ে আসছে বলে ধারণা করা হয়। বিগত কয়েক দশক থেকে আমাদের দেশেও পানিফলের চাষ হয়ে আসছে বিচ্ছিন্নভাবে কারও কারও ব্যক্তিগত আগ্রহে। যদিও পানিফল নিয়ে তেমন কোনো গবেষণা বা সুষ্ঠু পরিকল্পনা এখনও হয়নি। তবে বর্তমানে এ দেশেও সাতক্ষীরার দেবহাটা, নওগাঁ পানিফলের বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়েছে। এ ফলের গাছ হয় পানিতে। স্থির বা ধীর প্রবাহমান স্রোতের পানিতে পানিফল জন্মে। ফল দেখতে অনেকটা সিঙ্গাড়ার মতো বলে সাতক্ষীরার লোকরা একে ডাকে সেঙ্গারা ফল নামে। এ দেশের আরও বেশ কিছু জায়গায় পানিফল সিঙ্গারা ফল নামেই পরিচিতি। এটি একটি বর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। ইংরেজি নাম Water chestnut, উদ্ভিদ তাত্ত্বিক নাম Trapa bispinosa  পরিবার- Onagraceae। এটি ইংরেজিতে Water chestnut হলেও স্থানভেদে Water caltrop, Buffalo nut, Devil Pod এসব নামে পরিচিত। প্রজাতির নাম বাইস্পাইনোসা মানে দুইটি কাঁটা থেকেই বোঝা যায় যে ফলে দুইটি কাঁটা বর্ষজীবী জলজ ও গাছ। সাধারণত চীন, জাপান, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, ফিলিপাইন, আফ্রিকা এসব দেশে পানিফল আবাদ হয়। অনেকে পানিফলকে পানির বাদাম বলে কিন্তু আসলে বাদামের কোনো বৈশিষ্ট্যই নেই এতে। এটি পুরোপুরিভাবে পানীয় ফল। কাঁচা অবস্থায় এ ফল খাওয়া যায়। আবার সিদ্ধ করে, রান্না করে কিংবা প্রক্রিয়াজাত করেও খাওয়া যায়। চীনে বিভিন্ন সবজির সাথে মিশিয়ে সবজি রান্না করা হয়। চীনের খাদ্য তালিকায় পানিফল বেশ জনপ্রিয় এবং আবশ্যকীয়। চীনারা পানিফলকে শুকিয়ে আটা তৈরি করা হয়। সে আটা দিয়ে তারা পিঠা কেক বিস্কুট তৈরি করে খায়, বাজারে বিক্রি করে। কোথায় কোথায় পানিফল গোখাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের অতি পরিচিত পানিফলটি শুধু গ্রামেই নয় শহরের ফুটপাতের ফলের দোকানে স্থান করে নিয়েছে। তবে লাল ও কালচে সবুজ রঙের এ ফলটি এখনও শহরের বড় বড় ফলের দোকানে স্থান করে নিতে পারেনি অজ্ঞাত কারণে।
পানিফলের পুষ্টি ও ভেষজগুণ
পানিফল পুষ্টিতে ভরপুর। প্রায় ৯০ শতাংশ কার্বোহাইড্রেড, ৬০ শতাংশ শর্করা আছে। তাছাড়া বেশ ভালো পরিমাণ আঁশ, রাইবোফ্লেবিন, ভিটামিন বি, পটাসিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, আমিষ, ভিটামিন আছে। পুষ্টিমানের বিবেচনায় পানিফলে খাদ্য শক্তি আছে ৬৫ কিলোক্যালরি, জলীয় অংশ ৮৪.৯ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.৯ গ্রাম, খাদ্য আঁশ ১.৬ গ্রাম, আমিষ ২.৫ গ্রাম, চর্বি ০.৯ গ্রাম, শর্করা ১১.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১ ০.১৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ ০.০৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ১৫ মিলিগ্রাম। পানিফলের শুধু খাদ্যগুণই নয় রয়েছে ঔষধি গুণও। পানিফলের শাঁস শুকিয়ে রুটি বানিয়ে খেলে অ্যালার্জি ও হাত পা ফোলা রোগ কমে যায়। উদরাময় ও তলপেটে ব্যথায় পানিফল খুবই উপকারী। বিছাপোকা অন্যান্য পোকায় কামড় দিলে যদি জ্বালা পোড়া হয় তবে ক্ষতস্থানে কাঁচা পানিফল পিষে বা বেঁটে লাগালে দ্রুত ব্যথা দূর হয়। কাঁচা পানিফল বলকারক, দুর্বল ও অসুস্থ মানুষের জন্য সহজপাচ্য খাবার। পানিফলে শর্করা ও প্রোটিন আছে যথেষ্ট। শাঁস শুকিয়ে রেখে খাওয়া যায়।

পানি ফলের বোটানি
পানিফল অনাগ্রেসি পরিবারভুক্ত। বেশ কয়েকটি প্রজাতি আছে। ফল থেকে বংশবিস্তার হয়। পানিফলের গাছ ৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পানির নিচে মাটিতে এর শিকড় থাকে এবং পানির উপরে পাতাগুলো ভাসতে থাকে। মূলকাণ্ডের সঙ্গে গাঢ় সবুজ বা লালচে সবুজ ত্রিভূজাকৃতি মোটা ও নরম পাতাগুলো গোলাকারভাবে পানির উপর ভাসে। পাতা ৮ সেন্টিমিটর লম্বা ও পাতার কিনারা খাঁজকাটা, প্রায় ৬ সেন্টিমিটার চওড়া। পাতার বোঁটা পশমযুক্ত। পত্রফলক বেশ মাংসল পুরু তেল তেলে। পানিফলের ক্ষুদ্রাকার ও সাদা রঙের উভয়লিঙ্গ ফুল হয়। ফল দেখতে সিঙ্গাড়ার মতো তিন কোণাকার। দুই পাশে শক্ত দুইটি কাঁটা  থাকে। তবে ফল ভালোভাবে লক্ষ করলে দেখা যাবে পানিফল দেখতে যেন অবিকল গরুর মাথার মতো। দুই পাশে শিঙের মতো দুইটি কাঁটা ফলের উপর চোখ নাক মুখের আবয়ব অত্যন্ত স্পষ্ট। ফলের রঙ লাল, নীলাভ সবুজ বা কালচে সবুজ। পুরু নরম খোসা ছাড়ালেই পাওয়া যায় হৃৎপিণ্ডকার বা ত্রিভূজাকৃতির নারম সাদা শাঁস। কাঁচা ফলের নরম শাঁস খেতে বেশ মজা। রসাল ও মিষ্টি মিষ্টি ভাব। গাছের শিকড় থাকে প্যাক বা কাদার মধ্যে, কা- থাকে জলে ডুবে, পাতা ফুল ও ফল ভাসে পানির উপরে। পাতা দুইটি স্তরে গোলাপের পাঁপড়ির মতো চত্রাকারে বিপরীতমুখীভাবে কাণ্ডের উপর সাজানো থাকে। পাতা অনেকটা কচুরিপানা পাতার মতো দেখতে তবে ছোট ও পুরু, গাঢ় সবুজ। পাতায় শিরা তেমন চোখে পড়ে না মাংসল ভাবের জন্য। কা- নলাকার দড়ির মতো, পেনসিলের মতো মোটা হয়। গাছ ৫ মিটার গভীর পর্যন্ত পানিতে বেঁচে থাকতে পারে। পানি ফলের ৪ পাপড়ির ছোট ছোট ফুলগুলো খুবই মনোমুগ্ধকর। আগাম লাগালে প্রতি গাছে ১০ থেকে ১২টি শাখা হয়। আর দেরিতে লাগালে প্রতি গাছে ৬ থেকে ৭টি শাখা হয়। তবে অভিজ্ঞতায় বলে পানি ফলের গাত্রবৃদ্ধি বা বাড়বাড়তি ফুল আসার আগ পর্যন্ত চলতে থাকে। দেরিতে আসা শাখার ফল একটু ছোট এবং দুর্বল হয়।
পানিফলের উৎপাদন মৌসুম
জুন মাসের বৃষ্টি হলে চারা লাগানো হয়। তবে পানির ব্যবস্থা থাকলে অনেকে মে মাসেও চারা লাগান। বাংলা আষাঢ় মাস থেকে ভাদ্র আশ্বিন মাস পর্যন্ত চারা লাগানো যায়। মৌসুম শেষে পরিপক্ব ফল কোনো পুকুরে, পানিযুক্ত স্থানে, কিংবা কাদা পানিযুক্ত পাত্রে রেখে দেয়া হয়। কয়েক মাস পর ফল থেকে চারা গজায়। সে চারা পরে মৌসুমে মূল জমিতে লাগানো হয়। চারা লাগানোর ৬০ থেকে ৬৫ দিন পর ফুল আসে মানে অগ্রহায়ণ পৌষ মাসে। ফুল আসার ১৫ থেকে ২০ দিন পর ফল তোলার মতো পরিপক্ব হয়। ফলগুলো অনেক দিন পর্যন্ত অঙ্কুরোদগম সম্পন্ন থাকে। অবশ্য ২ বছরের মধ্যে অঙ্কুরোদগম হয়ে যায়। সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত পানিফল পাওয়া যায়। তবে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় নভেম্বর ডিসেম্বর মাসে।
পানিফলের আবাদ কৌশল
মোট জীবনকালের ৭ থেকে ৮ মাস মেয়াদি এ ফলটির পরিপক্ব বীজ রোপণ করতে হয় জ্যৈষ্ঠ মাসে। অল্প খরচে পানিতেই এ ফলের চাষ করা যায়। ১ থেকে দেড় ফুট পানি থাকাকালীন পুকুর বা বিলে কৃষক পানি ফলের চারা রোপণ করেন। এক চারা থেকে আরেক চারা দূরত্ব ১ থেকে দেড় হাত। লাগানো বা রোপণের সময়ের ওপর দূরত্ব কম বেশি করেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পানিফল জমির যেটুকু থেকে চারা তৈরি করা হবে সেটুকু পানিফল গাছ না তুলে রেখে দেয়া হয়। পরে পরিপক্ব ফল গাছ থেকে ফল ঝরে মাটিতে পড়ে। ওখান থেকে চারা হয়। নতুন একটি চারা থেকে অনেক চারা হয়। মে জুন মাসে বৃষ্টি শুরু হলে চারা লাগানো হয়। ফুল আসে লাগানোর ৬০ থেকে ৬৫ দিন পরে ফুল আসে। ফুল আসার ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে ফল তোলার মতো পরিপক্ব হয়। একটি গাছে ৫০-৭০টি ফল হয়। চার লাগানোর আগে শুকনা মাটিকে বা পানিযুক্ত মাটিতে এমওপি, ডিএপি, টিএসপি, জিপসাম সার দেয়া হয়। তবে সারের মাত্রা সব জায়গায় একরকম না। কেননা কৃষক নিজেদের বুদ্ধি আর বিবেচনায় সারের মাত্রা নির্ধারণ করেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কৃষি অফিসের সহায়তা নিয়ে সারের মাত্রা নির্ধারণ করেন। কেউ কেউ জৈবসারও ব্যবহার করেন। ফল চাষ শুরু হয় ভাদ্র-আশ্বিন মাসে এবং ফল সংগ্রহ করা হয় অগ্রহায়ণ পৌষ মাসে। ফল কচি অবস্থায় লাল, পরে সবুজ এবং পরিপক্ব হলে কালো রঙ ধারণ করে।   
ময়লা কলুষিত পানি পরিশোধের ক্ষমতা রয়েছে পানিফল গাছের। সে কারণে অনেকে নোংরা স্বল্প গভীর জলাশয় যেখানে মাছ চাষ করা যায় না এমন পরিত্যক্ত জায়গায় পানিফলের গাছ লাগিয়ে পানি পরিষ্কার করে পরের বছর তাতে মাছের চাষ করেন। পানি ফলের আদি বাসস্থান সম্ভবত এ উপমহাদেশে। কেউ কেউ মনে করেন আদি নিবাস ভারতবর্ষ। উত্তর আমেরিকাতে ১৮৭৪ সালে পানিফল প্রবর্তন ও চাষ শুরু করা হয় বলে জানা গেছে। এ দেশের নিচু এলাকার জলাশয়গুলোতে  জন্মে থাকে। বীজ থেকে পানি ফলের গাছ  জন্মে। সাধারণত পাকা ফলের বীজ প্রথম ২ বছরের মধ্যেই গজিয়ে যায়। পানিফলে সাধারণত তেমন কোনো রোগ পোকা দেখা যায় না। তবে কোনো কোনো সময় পানিবাহিত রোগ বা পাতা খাদক পোকা সমস্যা সৃষ্টি করে, আবাদ উৎপাদনের কিছুটা ক্ষতি করে। সে ক্ষেত্রে কৃষক কৃষি অফিসের সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেন এবং সমস্যা উতরিয়ে যান পানিফলকে বালাইয়ের ক্ষতি থেকে রক্ষা করেন।
পানিফলের আয়-ব্যয়
পানিফল বর্ষজীবী ফসল। মোটামুটি আবাদের ৪ থেকে ৫ মাস থেকেই ফল তোলা শুরু হয়। চলে ১ বছর পর্যন্ত। পতিত জলমগ্ন জমিতে পানিফল চাষ হয়। প্রতি বিঘায় ২ থেকে আড়াই মেট্রিক টন ফলন পাওয়া যায়। সে হিসাবে প্রতি হেক্টরে ১৮ থেকে ২০ মেট্রিক টন পর্যন্ত ফলন হয়। জলাশয়ে পানিফলের চাষাবাদ প্রতি বিঘায় খরচ হয় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা থেকে আয় হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। মণ পাইকারি পানিফলের মূল্য ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা মানে প্রতি কেজি পানিফল বিক্রি হয় ২০ থেকে ২৫ টাকায়। তবে শুরুতে এ ফল ১ হাজার ২০০ টাকা মণ হিসাবে পাইকারি বিক্রয় হয়, যা খুচরা বাজারে ২ হাজার  থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। দেশের সব জেলায় পানিফলের চাষাবাদ হয় না। তাই মানুষ এটি কম চেনে। কিন্তু সম্প্রতি সাতক্ষীরা থেকে এ ফল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। সুস্বাদু এ ফলটি এখন জেলার কালীগঞ্জ, সাতক্ষীরা সদর ও কলারোয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চাষ হচ্ছে। এ ফল চাষে অনেক বেকার শ্রমিকেরও কর্মসংস্থান হয়েছে। অধিক লাভ হওয়ায় দিন দিন এর চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে এক দিকে কৃষক লাভবান হচ্ছে, অপরদিকে বেকারত্বও দূর হচ্ছে। সবচেয়ে বড়কথা অল্প পুঁজিতে কম দামে বেশি ফলন লাভ এমন ফসল খুব কম আছে।
৭ থেকে ৮ মাস মেয়াদি এ ফলের বীজ রোপণ করতে হয় জ্যৈষ্ঠ মাসে। অল্প খরচে স্বল্প পানিতেই এ ফল চাষ করা যায়। এক থেকে দেড় ফুট পানি থাকাকালীন পুকুর বা বিলে কৃষক বীজ বপন করেন। ৪ থেকে ৫ মাসের মধ্যেই পানিফল গাছে ধরে। আশ্বিন মাস থেকে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত এ ফল বিক্রি করেন।
আষাঢ় মাসের বৃষ্টির পানিতে জলাশয়গুলো ভরে উঠলে পানি ফলের চারা ছেড়ে দেয়া হয়। ক্রমেই বাড়তে থাকে চারা গাছের সংখ্যা। পানির নিচের দিকে যেতে থাকে শিকড়গুলো। অল্পদিনের মধ্যেই গাছে-গাছে লতায় পাতায় ভরে যায় জলাশয়। পাতার কারণে তিল ফেলার জায়গা থাকে না। উৎপাদন খরচ একেবারেই কম। ভাদ্র মাস থেকে গাছে ফল আসা শুরু করে এবং পরিপক্ব হয়ে আশ্বিন-কার্তিক মাসে ফল বিক্রি শুরু হয়। চলে অনেক দিন। প্রতি সপ্তাহে ফল তোলা হয়। প্রতি একর জমিতে পানিফল চাষ করে খরচ বাদে লক্ষাধিক টাকা আয় করা যায়। এতে মাছ চাষে কোনো সমস্যা হয় না। অনেকেই পানি ফল চাষ করে লাভবান হওয়ায় এলাকার পুকুর জলাশয়ের মালিকরা পানি ফল চাষের গ্রতি আগ্রহ বাড়ছে। তাছাড়া পানিফলে পোকামাকড় আর রোগের আক্রমণ নেই বলে উৎপাদন খরচ একবারে কম, মানে লাভ বেশি পাওয়া যায়।
সাতক্ষীরাসহ বেশ কিছু জেলায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে পানিফল। জেলার জলাবদ্ধ এলাকার চাষি পানিফল চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছেন। ফলে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এ ফলের চাষ। লাভ বেশি হওয়ায় পানিফল চাষে আরও আগ্রহী হয়ে উঠেছে এ অঞ্চলের চাষি। সাতক্ষীরায় উৎপাদিত ফলটি এখন জেলার চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। বাংলাদেশে এ ফলটিকে পানিফল বা পানি শিংড়া বললেও এর মূল নাম বর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতি বছর দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। ফসল চাষের অনুপোযুক্ত এসব জলাবদ্ধ জমিতে পানিফল চাষ করে সফল হয়েছেন অনেক চাষি।
সিঙ্গারা ফল
অনেক আবার পানি ফলের সাথে সিঙ্গারা ফলকে গুলিয়ে ফেলেন। সে জন্য সিঙ্গারা ফলের ও কিছু বর্ণনা দিয়ে দিলাম একই সাথে। সিঙ্গাড়া ফল উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম : Trapa natans; পরিবার Trapacae| সিঙ্গাড়া ফল খুব শক্ত, বাদামি রঙের শক্ত সে খোসার মধ্যে থাকে নাট বা বাদামের মতো শাঁস। দা দিয়ে জোর করে কাটতে হয়। এজন্য প্রজাতির নাম Trapa natans রাখা যায়। ইংরেজি নাম Water caltrop সিঙ্গাড়ার মতো গড়ন বলে এ ফলের নাম সিঙ্গাড়া ফল। তবে এটিও এক ধরনের পানিফল। সচরাচর আমরা যে পানিফল দেখি তার শাঁস ও খোসা নরম, কাঁটা থাকে দুই দিকে দুইটি। আর সিঙ্গাড়া ফলের শাঁস ও খোসা শক্ত, কাঠের মতো, কাঁটা থাকে চারটি। কাঁটাগুলো  সরু, শক্ত বেশ তীক্ষ্ন। চারটি কাঁটা থাকায় সম্ভবত সিঙ্গাড়া ফলের আগের প্রজাতি নাম ছিল Trapa quadrispinosa সিঙ্গাড়া ফলের গাছ ভাসমান বর্ষজীবী জলজ প্রকৃতির। পাতা ত্রিভূজাকৃতির, গাঢ় সবুজ। শিকড় ও কন্দ থাকে প্যাক বা কাদার মধ্যে, কাণ্ড থাকে পানিতে আর পাতা, ফুল ও ফল পানির উপর ভেসে থাকে। ফলের আকার অনেকটা ত্রিভূজাকার, প্রিজমের মতো, শক্ত। কেটে ভেতরের সাদা শাঁস খাওয়া যায়। শাঁস স্বাদে পানসে মিষ্টি, কিন্তু চিবিয়ে খেতে মজা লাগে। কোথাও কোথাও  পাকা ফলের শাঁস আলুর মতো রান্না করে খাওয়ারও প্রচলন আছে। এমনকি শাঁস শুকিয়ে গুঁড়া করে রেখে পরে খাওয়া যায়। কাঁচা ফল প্রস্রাব ও রুচি বৃদ্ধিকারক, বলবর্ধক। সিঙ্গাড়া ফলের দেখা মিলেছে পাবনার বিল কুরারিয়ায়। সুনামগঞ্জের হাওরেও আছে।
পানি ফলটি দেশব্যাপী খুব বেশি পরিচিত নয়। অনেকে হয়তো এখনও চিনেনই না। পানিফল পুষ্টি সমৃদ্ধ, ভেষজগুণ সম্পন্ন সহজ সরল কৌশলে উৎপাদিত দামি ফল। আবাদের খরচ নেই বললেই চলে। লাভ হয় অনেক বেশি। সবচেয়ে বড় কথা যেসব জমিতে অন্যান্য ফসল আবাদ করা যায় না সেখানে অনায়াসে পানিফল আবাদ করা যায়। পতিত জমি আবাদের আওতায় এনে লাভবান হওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে পানিফলটি আমাদের কৃষি উন্নয়ন সমৃদ্ধিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে। তবে এক্ষেত্রে উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, ব্যবহার এসবের ওপর ব্যাপক গবেষণা হওয়া দরকার, সার ব্যবস্থাপনা, বালাই ব্যবস্থাপনার ওপর বিশেষ পরামর্শ ও অনুমোদন দরকার। আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা আর বিনিয়োগে পানিফল দিয়ে আমার আরও অনেক দূরে এগিয়ে যেতে পারব কৃষি ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করে।

কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম*
*উপরিচালক (গণযোগাযোগ), কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫ subornoml@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon